ধ্রুব ডেস্ক
ভারতীয় ক্রিকেটে যে নামটি এতদিন অনেকের কাছেই অপরিচিত ছিল, সেই সাকিবুল গনি এখন ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায়। রাঁচির জেএসসিএ ওভাল গ্রাউন্ডে বিহার বনাম অরুণাচল প্রদেশ ম্যাচে মাত্র ৩২ বলে সেঞ্চুরি করে রেকর্ডবই ওলটপালট করে দিয়েছেন তিনি।
বিজয় হাজারে ট্রফি ২০২৫-২৬ আসরের প্রথম দিনই টুর্নামেন্টের ৩৩ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত দিনে পরিণত হয়েছে। সাকিবুল গনির ৩৯ বলে ১২২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস ছাড়িয়ে গেছে বিহারের তরুণ তারকা বৈভব সূর্যবংশীর আগের দুর্দান্ত ইনিংসকেও।
সূর্যবংশীর ঝোড়ো শুরু আর শেষদিকে গনির তাণ্ডবে ভর করে বিহার তোলে ৬ উইকেটে বিশাল ৫৭৪ রান, যা লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। আগের রেকর্ডধারী (৫০৬ রান) তামিলনাড়ুকে পেছনে ফেলে নতুন ইতিহাস গড়ে তারা।
১৯৯৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া সাকিবুল গনির বাড়ি ভারতের বিহারের পূর্ব চম্পারণ জেলার মতিহারিতে। আর্থিক ও সামাজিক নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা ছাড়েননি তিনি।
দীর্ঘ সংগ্রামের পর ২০১৯ সালে বিহারের হয়ে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার।
২০২২ সালে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেকেই ৩৪১ রান করে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকে ট্রিপল সেঞ্চুরি করা প্রথম ব্যাটার হন গনি। পরের দুই ইনিংসে করেন ৯৮ ও অপরাজিত ১০১ রান, প্রথম তিন ইনিংসে মোট ৫৪০ রান করে নজির গড়েন তিনি।
২০২২ সালে নিউজ৯ স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিহার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি আদিত্য ভার্মা বলেছিলেন, ‘সে অত্যন্ত সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছে।
স্থানীয় ছেলে হলেও অসাধারণ প্রতিভা। এখন মানুষ ওকে চিনছে, তবে বিজয় হাজারে ট্রফি ও সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতেও সে ভালো করেছে। রঞ্জিতে নামানোর আগে আমরা ওকে মুম্বাইয়ে পাঠিয়েছিলাম, সেখানেও সে দারুণ খেলেছে।’
তিনি আরো যোগ করেন, ‘এক সময় পেশাদার ক্রিকেট কীভাবে খেলতে হয়, সেটাই সে জানত না। তখনই আমরা ওর পাশে দাঁড়াই।
ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলোয়াড়রা অনেক সময় বড় দলের বা আইপিএলের সঙ্গে না থাকলে আলোচনায় আসে না। কোচ, প্রশাসক ও স্কাউটদের ভূমিকা তখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা খুশি, ও আজ তার প্রমাণ দিচ্ছে।’
এদিকে ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন ইতিহাস লিখল বিহার। ১৪ বছর বয়সী ব্যাটিং প্রতিভা বৈভব সূর্যবংশীর বিধ্বংসী ১৯০ রানের ইনিংসে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ দলীয় রানের বিশ্বরেকর্ড গড়েছে দলটি।
বিজয় হাজারে ট্রফিতে বুধবার অরুণাচল প্রদেশের বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমে ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে বিহারের সংগ্রহ দাঁড়ায় রেকর্ড ৫৭৪ রান। এর ফলে ২০২২ সালে তামিলনাড়ুর করা ৫০৬ রানের পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুন করে শীর্ষে উঠে আসে বিহার।
ইনিংসের শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করেন সূর্যবংশী। মাত্র ৩৬ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি, যা ভারতীয়দের মধ্যে দ্বিতীয় দ্রুততম। ১৫টি ছক্কা ও ১৬ চারের সাহায্যে ৮৪ বলে ১৯০ রান করে আউট হওয়ার সময় ২৭ ওভারেই বিহারের স্কোর ২৬০ ছাড়িয়ে যায়।
এই ইনিংসের পথে একাধিক রেকর্ড গড়েন কিশোর ব্যাটার।
তিনি লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান হন এবং দ্রুততম ১৫০ রানের রেকর্ডও নিজের করে নেন।
সূর্যবংশী আউট হওয়ার পর দায়িত্ব সামলান আয়ুষ লোহারুকা। ৩৫ বলে ফিফটি করে তিনি মাত্র ৫৬ বলে ১১৬ রান করেন। অন্যদিকে সাকিবুল গনি খেলেন ঝোড়ো ৪০ বলে ১২৮ রানের ইনিংস, আর পিয়ুষ কুমার সিং যোগ করেন ৭৭ রান।
শেষ দিকে গনি ও বিপিন সৌরভের ব্যাটে আরো গতি পায় ইনিংস। গনি মাত্র ৩২ বলে সেঞ্চুরি করে ভারতীয়দের মধ্যে দ্রুততম শতকের নতুন রেকর্ড গড়েন। ৪৬তম ওভারের চতুর্থ বলেই বিহার পেরিয়ে যায় ৫০০ রানের মাইলফলক। শেষ পর্যন্ত ইতিহাসগড়া ৫৭৪ রানে থামে বিহারের ইনিংস।