ধ্রুব ডেস্ক
❒ মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় গৃহকর্মী আয়েশার হাতে নৃশংসভাবে খুন হন মা ও মেয়ে। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে চাঞ্চল্যকর মা-মেয়ে হত্যার নেপথ্যে টাকা চুরির অপবাদ থেকে বিরোধ। গ্রেফতারের পর এমনটাই দাবি করেছেন গৃহকর্মী আয়েশা। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) ঝালকাঠি থেকে গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে ‘হিট অব দ্য মোমেন্টে’ খুন করার কথা জানিয়েছেন গৃহকর্মী আয়েশা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আয়েশা জানিয়েছেন, খণ্ডকালীন গৃহকর্মীর কাজ নেয়ার পরই ওই বাসা থেকে কিছু টাকা খোয়া যায়। এ ঘটনায় গৃহকর্তী লায়লা আফরোজ (৪৮) তাকে দোষারোপ করেন। টাকা চুরির অপবাদে কয়েক দফায় টর্চারও করা হয়। এর প্রেক্ষিতেই ‘হিট অব দ্য মোমেন্টে’ ঘটে যায় এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড।
তবে আয়েশার এ বক্তব্য কতটা সঠিক সে বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের স্বল্প সময়ের মধ্যেই আয়েশাকে গ্রেফতার পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের বড় অর্জন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান বলেন, গ্রেফতার আয়েশা এখনও ঢাকায় এসে পৌঁছেনি। তাকে গ্রেফতারকারী টিম ঢাকায় পৌঁছালে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ বিষয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।
সোমবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে নিজের বাসায় খুন হন মা লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বাসার গৃহকর্মী আয়েশা ওইদিন বোরকা পরে ঢুকে স্কুল ড্রেস ও মাস্ক পরে বেরিয়ে যান। এ ঘটনায় গৃহকর্মীকে আসামি করে মামলা করেন গৃহকর্তা এম জেড আজিজুল ইসলাম।
পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার চার দিন আগে মোহাম্মদপুর শাজাহান রোডের ৩২/২/এ নম্বর বাসার সাততলার বাসায় কাজ নেন ওই গৃহকর্মী। নিজেকে আয়েশা নামে পরিচয় দেন। মা ও মেয়েকে হত্যার পর নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যান আয়েশা।
নিহত লায়লা আফরোজ ছিলেন গৃহিণী, আর মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজ মোহাম্মদপুরের প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নাফিসার বাবা এম জেড আজিজুল ইসলাম উত্তরায় সানবীমস স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক।
ভবনের একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নাফিসার বাবা স্কুলের উদ্দেশ্যে সকাল ৭টার দিকে বের হয়ে যান। এর ঘণ্টাখানেক পর ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে ওই বাসায় প্রবেশ করেন গৃহকর্মী আয়েশা। দেড় ঘণ্টা পর ৯টা ৩৬ মিনিটে স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যান তিনি। ওই স্কুল ড্রেস নাফিসার। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নাফিসার বাবা বাসায় ফিরে স্ত্রী ও মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, মাকে হত্যার বিষয়টি বুঝতে পেরে মেয়ে নাফিসা ডাইনিং রুমে রাখা ইন্টারকম থেকে কাউকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হলে সেখানেই তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ওই সময় ধস্তাধস্তিতে ইন্টারকমের লাইন খুলে যায়। বাসায় তল্লাশি করে বাথরুমে একটি সুইচ গিয়ার চাকু ও একটি ফল কাটা ছুরি পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ছুরি দুটি দিয়েই মা-মেয়েকে হত্যা করে গৃহকর্মী আয়েশা। এই ঘটনায় ওই বাসার দারোয়ান মালেককে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।