বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

বেনাপোল রেলপথে 'আমদানি-খরা' কেন?

রমজান আলী, বেনাপোল (যশোর) রমজান আলী, বেনাপোল (যশোর)
প্রকাশ : সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর,২০২৫, ০২:১৮ পিএম
বেনাপোল রেলপথে 'আমদানি-খরা' কেন?

❒ বেনাপোল বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় ভারতীয় রেক ছবি: ধ্রুব নিউজ

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র বেনাপোল-পেট্রাপোল রেলপথ। এক সময় যে রুট দিয়ে হু হু করে আসত খাদ্যপণ্য ও জরুরি কাঁচামাল, আজ সেই পথেই নেমেছে নজিরবিহীন 'আমদানি-খরা'। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, গত ছয় মাস ধরে চাল, গম, পেঁয়াজ বা আলুর মতো কোনো খাদ্যপণ্য এই রুটে প্রবেশ করেনি। বন্দর ব্যবহারকারীরা ভারতীয় রেলের অনিয়মিত রেক সরবরাহ, জরাজীর্ণ অবকাঠামো এবং বন্দরের দুর্বল ব্যবস্থাপনাকে দুষছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এটি কেবল আমদানিতে পতন নয়, এটি জাতীয় অর্থনীতির রক্তক্ষরণ।

রেলওয়ে সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রেলপথে পণ্য আমদানি উদ্বেগজনক হারে কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ৭ হাজার ২০০ মেট্রিক টন পণ্য। পরের অর্থবছর ২০২৩-২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৮ হাজার ২০০ মেট্রিক টনে। অর্থাৎ, মাত্র এক বছরে প্রায় ২৯ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি কমেছে— যা গত এক দশকের মধ্যে এই রুটে সর্বোচ্চ পতন।

বর্তমানে ক্লিংকার, স্টোনচিপ, কয়লা, খাদ্যশস্য, সিমেন্টের কাঁচামাল, তুলা, ট্রাক্টর ও গার্মেন্টস উপকরণসহ বাল্ক কার্গোর আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রেলপথে বাল্ক কার্গো কম খরচে পরিবহন করা সম্ভব হলেও বাস্তবে তারা সেই সুবিধা পাচ্ছেন না। এই সংকটের পেছনে বেশ কিছু গুরুতর কারণ চিহ্নিত হয়েছে, ভারতীয় রেলের অনিয়মিত রেক সরবরাহ। বেনাপোল রেলস্টেশনের পুরোনো অবকাঠামো ও ইয়ার্ড সংকট। আধুনিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি ও শ্রমিক সংকট। কাস্টমস, রেল ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও ভিসা জটিলতা ও দেশের বর্তমান পরিস্থিতি।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আগে প্রতি সপ্তাহে চার থেকে ছয়টি রেক আসত। এখন কোনো কোনো সপ্তাহে একটি রেকও পাওয়া যায় না। ভারতীয় রেলের রেক সময়মতো না আসায় দিনের পর দিন পণ্য আটকে থাকে, ফলে বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হয়। এমন অনিশ্চয়তার কারণে বাধ্য হয়ে আমরা সড়কপথে ঝুঁকছি।’

আমদানিকারক মো. সাইফুল ইসলাম স্টেশনটির অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরেন, ‘গত ১২ বছর ধরে রেলপথে পণ্য আমদানি করছি। কিন্তু এখানকার অবকাঠামো পুরোনো, ফর্কলিফট কম এবং শ্রমিক সংকট লেগেই থাকে। ফলে একটি রেক খালাস করতেই আট থেকে দশ ঘণ্টা লেগে যায়। অথচ ভারতের পেট্রাপোলে একই কাজ দুই ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়।’

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘রেলপথ দেশের সবচেয়ে সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা। এখানে আমদানি কমে গেলে পরিবহন ব্যয় বাড়বে, যার প্রভাব সরাসরি বাজারে পণ্যের দামে পড়বে। আমরা ভারতীয় রেলের সঙ্গে স্থায়ী রেক সরবরাহ চুক্তি, আধুনিক রেল টার্মিনাল নির্মাণ ও দ্রুত খালাস ব্যবস্থার ওপর জোর দিচ্ছি।’

বেনাপোল রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান আমদানি কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘গত ছয় মাসে চাল, গম, ভুট্টা, মরিচ, পেঁয়াজ ও আলুসহ কোনো খাদ্যপণ্য আসেনি। রেক সংকট আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ভারতীয় রেলওয়ে নিয়মিত রেক সরবরাহ না করায় আমদানি ব্যাহত হচ্ছে।’

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামিম হোসেন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘রেলপথে আমদানি কমে যাওয়া আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। আমরা খালাসের সময় কমাতে ও কাগজপত্রের জটিলতা দূর করতে রেল ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি।’

 

ধ্রুব নিউজের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

💬 Comments

Login | Register
Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)