তহীদ মনি
❒ ‘বেদেনীর প্রেম’ নাটকের একটি দৃশ্য ছবি: জাহিদ হাসান টুকুনের ফেসবুক থেকে নেওয়া
আধুনিকতার ভিড়ে যখন লোকসাহিত্যের রহস্যময় কাহিনিগুলো ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই সেই নস্টালজিক সময়ের অনুভূতি ফিরিয়ে আনার ব্যতিক্রমী প্রচেষ্টা চালালো যশোর ইনস্টিটিউটের নাট্যকলা সংসদ। গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতে যশোর শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হলো রাজপুত্র ও বেদেকন্যার অমর প্রেমের কাহিনি নির্ভর নাটক—‘বেদেনীর প্রেম’। প্রথম মঞ্চায়নেই নাটকটি দর্শক মহলে সাড়া ফেলেছে। প্রমাণ করেছে, সমাজের সকল দ্বন্দ্বে সত্য প্রেম চিরকাল অবিনশ্বর।
প্রেমের কাছে নগণ্য সকল বিভেদ
‘বেদেনীর প্রেম’ শুধুমাত্র একটি প্রেমের গল্প নয়, এটি জীবন সংগ্রামের দ্বন্দ্ব ও সমাজ বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে এক স্বর্গীয় প্রেমের উপাখ্যান। নাটকের মূল বিষয়বস্তু ছিল সামাজিক জাতিগতহীন ভাবনা, বিদ্বেষের দ্বন্দ্ব, লোভের হিংসা, অমিলের ঘৃণা ও অহংকারবোধের সংঘাত। তবে নাটকের পরতে পরতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে কীভাবে এই সকল সামাজিক ভেদাভেদ ও সংঘাত প্রকৃত প্রেমের কাছে তুচ্ছ হয়ে ধরা দেয়।
উঁচু-নীচু বিভেদের দেওয়াল ভেঙে সত্য প্রেমের জয়গান-ই ছিল এই নাটকের মূল সুর। আকাশছোঁয়া স্বপ্নভঙ্গের নিগুঢ় বাস্তবতায় মন চমকে উঠলেও, শেষে সাম্যের গান বেজে ওঠে ভালোবাসার শক্তিতে। এই উপস্থাপনা এক গভীর বার্তা দিয়েছে— প্রথাগত সমাজের নিয়ম-নীতি বা অহংবোধ কখনোই হৃদয়ের বাঁধনকে আটকাতে পারে না।
অভিনয় শিল্পী ও মঞ্চের নেপথ্য
'বেদেনীর প্রেম' নাটকটি রচনা করেছেন সুকেন্দ্র নাথ পোদ্দার। তিনি সহ আব্দুর রহমান কিনা যুগ্মভাবে নির্দেশনার দায়িত্ব পালন করেন।
এই মঞ্চসফল নাটকে যারা দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন, সেই অভিনয় শিল্পীরা হলেন—আব্দুর রহমান কিনা (নির্দেশক ও অভিনেতা)। অন্যরা হলেন—নাজনীন আক্তার লাকী, জাহিদ হাসান টুকুন, শফিকুল আলম পারভেজ ,আলিফা সুলতানা লিটা, শাহীন ইসলাম বিশাল, নাসির উদ্দিন মিঠু, আনিসুজ্জামান পিন্টু, শাহরিয়াজ বিশ্বাস সোহাগ, মিলন শেখ আপন, মাইকেল।

আবেগ ও নস্টালজিয়ায় ভরা একঘণ্টা
একঘণ্টার এই মঞ্চায়নে দর্শক কখনও হাসির দৃশ্যে মেতেছেন, কখনও হিংসা ও দ্বন্দ্বে ব্যথিত হয়েছেন, আবার কখনও রাজপুত্র ও বেদেকন্যার স্বর্গীয় প্রেমের দৃশ্যায়নে মুগ্ধ হয়েছেন। আয়োজকরা সফলভাবে দর্শকদের নস্টালজিক সময়ের অনুভূতিতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছেন, যা দর্শকদের বিপুল করতালির মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। দর্শকদের এমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই জানান দিয়েছে— সত্যি প্রেম অবিনশ্বর।
নাটকটি দেখতে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামসহ অসংখ্য নাট্যপ্রেমী দর্শক। সকলে মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেছেন এই মঞ্চসফল পরিবেশনা।
আয়োজকরা জানান, বর্তমান সময়ে আধুনিকতার কোলাহলে লোকগাথা নির্ভর নাটকগুলো বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তাদের এই প্রচেষ্টা ছিল সেই হারানো নস্টালজিক অনুভূতিকে শিল্পকলার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা।
‘বেদেনীর প্রেম’ শুধুমাত্র যশোরের নাট্যমঞ্চেই নয়, বরং সামাজিক ভেদাভেদ দূর করে সাম্য প্রতিষ্ঠার এক চিরন্তন বার্তাও দিয়ে গেল।