ধ্রুব ডেস্ক
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের পরিধি বাড়তে যাচ্ছে—এমন খবরে গত দুই দিন ধরে সচিবালয় ও বঙ্গভবনে ব্যাপক তোড়জোড় পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে সোমবার সন্ধ্যায় নতুন উপদেষ্টাদের শপথ গ্রহণের প্রস্তুতি শুরু হলেও রাতেই আবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ‘ধীরে চলো’ বার্তা দেওয়া হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি জরুরি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বঙ্গভবনে নতুন উপদেষ্টাদের শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ ছিল। চিঠির নির্দেশনায় বলা হয়েছিল: নতুন উপদেষ্টাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গানম্যান প্রস্তুত রাখা। বিশিষ্টজনদের বঙ্গভবনে যাতায়াতের জন্য বিশেষ ট্রাফিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য দরবার হল প্রস্তুত করা।
তবে এই তোড়জোড়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাতে পুনরায় মৌখিক নির্দেশনায় শপথের কার্যক্রম ‘স্লো’ বা ধীরে করার কথা বলা হয়েছে। তবে পূর্বের চিঠিটি এখনো বাতিল বা স্থগিত করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, উপদেষ্টা হিসেবে কাদের নাম চূড়ান্ত করা হবে, তা নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে শেষ মুহূর্তের চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। বিশেষ করে: দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা পূর্বতন বিতর্ক আছে কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে। নতুন উপদেষ্টাদের কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর দেওয়া হবে, তা নিয়েও সমন্বয় চলছে।
শপথের জন্য কতজনকে ডাকা হচ্ছে, সে বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত ৪ থেকে ৫ জন নতুন সদস্য এই পরিষদে যুক্ত হতে পারেন। বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ২১ জন। প্রশাসনিক কাজের গতি বাড়াতে এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিনের।
বর্তমানে অনেক উপদেষ্টার হাতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রয়েছে। এর ফলে প্রশাসনিক কাজে কিছুটা ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যেমন: প্রধান উপদেষ্টার হাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও দপ্তর রয়েছে। অনেক উপদেষ্টা ৩ থেকে ৪টি দপ্তরের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
এই কাজের চাপ কমাতেই মূলত ‘পোর্টফোলিও রি-অ্যালোকেশন’ বা দপ্তর পুনর্বণ্টনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন উপদেষ্টারা শপথ নিলে কিছু বর্তমান উপদেষ্টার দপ্তর পরিবর্তন হতে পারে অথবা ছোট করা হতে পারে।
আজকের জন্য নির্ধারিত শপথ অনুষ্ঠানটি স্থগিত হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে শোনা যাচ্ছে— ‘শেষ মুহূর্তের স্ক্রিনিং’। ছাত্র ও জনগণের পক্ষ থেকে যাতে প্রস্তাবিত নামগুলো নিয়ে কোনো আপত্তি না ওঠে, সেজন্য প্রধান উপদেষ্টা নিজে তালিকাটি পুনরায় পর্যবেক্ষণ করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। নতুন উপদেষ্টাদের নাম এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। তবে গুঞ্জন রয়েছে যে, তালিকায় অন্তত একজন নারী এবং একজন আইন বিশেষজ্ঞ যুক্ত হতে পারেন।