বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

মায়াধরপুরের আলোকবর্তিকা একজন ফজলুর রহমান

বিশেষ প্রতিনিধি বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : রবিবার, ২১ ডিসেম্বর,২০২৫, ০১:১৬ এ এম
আপডেট : রবিবার, ২১ ডিসেম্বর,২০২৫, ০১:৩৪ এ এম
মায়াধরপুরের আলোকবর্তিকা  একজন ফজলুর রহমান

❒ এক দূরদর্শী স্বপ্নদ্রষ্টা—ফজলুর রহমান ছবি: ফাইল

ঝিনাইদহ জেলার মায়াধরপুর গ্রাম। আজ থেকে কয়েক দশক আগে যে গ্রামের পরিচয় ছিল সাধারণ আর দশটা নিভৃত পল্লীর মতো, সেই গ্রামই একদিন আন্তর্জাতিক সংবাদ শিরোনাম হয়েছিল। আর এই অসাধ্য সাধনের নেপথ্যে ছিলেন এক জননায়ক, এক দূরদর্শী স্বপ্নদ্রষ্টা—ফজলুর রহমান। জীবন সংগ্রামের দীর্ঘ ৮০ বছর অতিক্রম করে গেল বছর ১৬ মে ২০২৪ তারিখে তিনি  না ফেরার দেশে চলে গেছেন। কিন্তু রেখে গেছেন এক অনন্য কর্মময় জীবন, যা বাংলাদেশের কৃষি ও সমবায় আন্দোলনের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আশির দশকের শুরুতে যখন দেশের কৃষি ব্যবস্থা ছিল একান্তই মান্ধাতা আমলের, তখন ফজলুর রহমান উপলব্ধি করেছিলেন—একাকী নয়, বরং সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টাই পারে কৃষকের ভাগ্য বদলাতে। ১৯৮০ সাল থেকে তিনি মায়াধরপুরের কৃষকদের দোরে দোরে ঘুরে জনমত গঠন শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মায়াধরপুর প্রগতি কৃষক সমবায় সমিতি’। সমিতির ম্যানেজার হিসেবে তিনি বৈজ্ঞানিক চাষাবাদের সূচনা করেন।

বিএডিসি’র সহযোগিতায় গভীর নলকূপ স্থাপন এবং পাকা ড্রেন নির্মাণের মাধ্যমে তিনি মায়াধরপুরকে এক আধুনিক কৃষি মডেল হিসেবে দাঁড় করান। ফলে খুব দ্রুতই এই সমিতি শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি লাভ করে। ফজলুর রহমান এবং তার সংগঠন ছয়বার ‘রাষ্ট্রীয় পুরস্কার’ জয় করার গৌরব অর্জন করেন। তার সাফল্যগাথা শুনে সিঙ্গাপুর, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশেষজ্ঞ দল মায়াধরপুর পরিদর্শনে আসতেন।

গুণধরপুত্র সেলিম রেজা সেলিম ও সফল পিতা ফজলুর রহমান। ছবি: ফাইল

সে সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তার পরিবার জানায়, বিদেশি প্রতিনিধিরা যখন গ্রামে আসতেন, তখন মায়াধরপুর জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠত। এমনকি তার সহধর্মিণী ও প্রতিবেশীরা অক্লান্ত পরিশ্রমে অতিথিদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করতেন।

কৃষির পাশাপাশি  ফজলুর রহমানের আরেকটি অবিস্মরণীয় কাজ ছিল নিরক্ষরতা দূরীকরণ। ১৯৯০ সালে তিনি মায়াধরপুরকে নিরক্ষরতামুক্ত করার শপথ নেন। তার উদ্যোগে গ্রামের প্রতিটি শিক্ষিত তরুণ-তরুণীকে তাদের বাড়ির নিরক্ষর সদস্যদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক স্বয়ং উপস্থিত হয়ে বৃদ্ধ ও গ্রামবাসীদের স্লেটে লেখা পরীক্ষা নিয়ে গ্রামটিকে নিরক্ষরতামুক্ত ঘোষণা করেছিলেন, যা তৎকালীন শীর্ষ দৈনিক ইত্তেফাকে সংবাদ হিসেবে গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়েছিল।

ফজলুর রহমান শুধু কৃষি বা শিক্ষাতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি দীর্ঘ ২১ বছর ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুতের ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া চারটি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, জেলা শিক্ষা কমিটির সদস্য এবং উপজেলা ইউসিসি-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও কাজ করেছেন। কুলফাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে তাঁর ২৩ বছরের সেবা আজও গ্রামবাসী শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন একজন সফল পিতা। তার তিন পুত্র ও এক কন্যা প্রত্যেকেই উচ্চশিক্ষিত এবং সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত। তার সন্তানদের মধ্যে দুইজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দেশের সেবা করছেন। তার সুযোগ্য সন্তান সেলিম রেজা তার বাবার এই বীরত্বগাথা তুলে ধরে লিখেছেন, "আমি আমার আব্বাকে নিয়ে দারুণ মর্যাদাবোধ করি।"

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্যসূত্র হিসেবে গুণীপুত্র সেলিম রেজা সেলিমের স্মৃতিচারণমূলক লেখা ব্যবহৃত হয়েছে।)

 

ধ্রুব নিউজের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

💬 Comments

Login | Register
Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)