বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

ইনকিলাব মঞ্চের হাদি গুলিবিদ্ধের ঘটনায় গুজবে সয়লাব ফেসবুক : ফ্যাক্টওয়াচ

ধ্রুব ডেস্ক ধ্রুব ডেস্ক
প্রকাশ : মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর,২০২৫, ০৭:৫৩ পিএম
ইনকিলাব মঞ্চের হাদি গুলিবিদ্ধের ঘটনায় গুজবে সয়লাব ফেসবুক : ফ্যাক্টওয়াচ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে ব্যাপক গুজব ও ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে শনাক্ত করেছে ফ্যাক্টওয়াচ।

ফ্যাক্টওয়াচ জানায়, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগরে শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ফেসবুকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ভুয়া ফটোকার্ড, এআই জেনারেটেড ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ফ্যাক্টওয়াচের মনিটরিংয়ে এমন একাধিক বিভ্রান্তিকর দাবি নজরে এসেছে।

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সম্প্রচার মাধ্যম আরটিভির নাম ও লোগো ব্যবহার করে একটি ভুয়া ফটোকার্ড ফেসবুকে ছড়ানো হয়। এতে ডিএমপি কমিশনার সূত্রে দাবি করা হয়, ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীরা জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

তবে যাচাইয়ে দেখা যায়, আরটিভি এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। তাদের ভেরিফায়েড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ওয়েবসাইটেও এ ধরনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বরং একই ছবি ব্যবহার করে গত ১৩ ডিসেম্বর আরটিভির ফেসবুক পেজ থেকে ভিন্ন একটি ফটোকার্ড প্রকাশ করা হয়, যার শিরোনাম ছিল— ‘হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিদের শনাক্ত করেছে পুলিশ: ডিএমপি কমিশনার।’

ফ্যাক্টওয়াচ জানায়, একই দিন ডিএমপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজেও ওই ভুয়া ফটোকার্ডটিকে ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ভুয়া ফটোকার্ডটি উদ্ধৃত করে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক বক্তব্যে মন্তব্য করেছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। পরে তিনি বিষয়টিকে ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ বলে দুঃখ প্রকাশ করেন।

প্রায় একই দাবিতে দৈনিক কালবেলার নাম ও লোগো ব্যবহার করেও একটি ভুয়া ফটোকার্ড ছড়ানো হয়। এতে লেখা ছিল— ‘ওসমান হাদির ওপর হামলায় জামায়াত-শিবির জড়িত।’

ফ্যাক্টওয়াচ জানায়, কালবেলার ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে এমন কোনো ফটোকার্ড বা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

তবে ১২ ডিসেম্বর কালবেলার ফেসবুক পেইজে প্রচারিত একটি আসল ফটোকার্ড পাওয়া গেছে, যার শিরোনাম ছিল— ‘ওসমান হাদির সর্বশেষ অবস্থা জানালেন চিকিৎসক।’ ওই ফটোকার্ডের শিরোনাম পরিবর্তন করে মিথ্যা দাবি প্রচার করা হচ্ছে।

এ ছাড়া বিবিসি বাংলার নাম ও লোগো ব্যবহার করে একাধিক ভুয়া ফটোকার্ড ছড়ানো হয়েছে। এসব ফটোকার্ডে লেখা ছিল— ‘সাদিক কায়েমকে প্রার্থী করার জন্য হাদিকে সরিয়ে দিতে শিবিরের হামলা’ এবং ‘হাদির ওপর হামলাকারীকে আগেও দুইবার জামিন করিয়েছেন শিশির মনির।’

ফ্যাক্টওয়াচের যাচাইয়ে দেখা যায়, বিবিসি বাংলার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ, তাদের অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া বা ওয়েবসাইটে এমন কোনো প্রতিবেদন নেই। পাশাপাশি এসব ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ফন্টও বিবিসি বাংলার প্রকৃত ফটোকার্ডের সঙ্গে মিলছে না। ফলে বিবিসি বাংলার নামে ছড়ানো এসব ফটোকার্ড ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে।

অন্যদিকে, ‘আমার দেশ’ পত্রিকার নাম ও লোগো ব্যবহার করে একটি ফটোকার্ডে দাবি করা হয়, ‘ওসমান হাদিকে গুলি করা ঘাতকের কল লিস্টে সাদিক কায়েমের নম্বর।’ তবে গত ১৩ ডিসেম্বর আমার দেশ পত্রিকা তাদের ফেসবুক পেইজে জানায়, এই ফটোকার্ডটি ভুয়া এবং তাদের নামে ফেইক কার্ড তৈরি করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।

ফ্যাক্টওয়াচ আরও জানায়, ‘রুখে দাঁড়াও বিডি’ নামের একটি ওয়েবসাইট থেকেও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। ওয়েবসাইটটির ডোমেইন গত ৩ নভেম্বর নিবন্ধন করা হয়। সেখানে খুব কম কনটেন্ট রয়েছে এবং সেগুলো বিশ্লেষণে এটি একটি প্রোপাগান্ডামূলক সাইট বলে মনে হয়েছে।

শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার দিন সন্দেহভাজন ঘাতকের মুখের মাস্ক পরা ছবি বিশ্লেষণ করে একটি পোস্ট দেয় ডিজিটাল ইনভেস্টিগেটিভ মিডিয়া ‘দ্য ডিসেন্ট’। এর পর ফেসবুকে মাস্কহীন এক ব্যক্তির ছবি ছড়িয়ে দাবি করা হয়, তিনি হাদির বন্ধুর ছোট ভাই এবং ছবিটি সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেওয়া।

ফ্যাক্টওয়াচ জানায়, যাচাইয়ে দেখা গেছে ছবিটি এআই জেনারেটেড। একাধিক এআই ইমেজ শনাক্তকারী টুল ছবিটিকে কৃত্রিমভাবে তৈরি বলে নিশ্চিত করেছে।

এ ছাড়া ‘হাদির ওপর হামলাকারী গ্রেফতার’ দাবি করে ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়ানো হয়। সেখানে ক্যাপশনে বলা হয়, হামলাকারী পাহাড়িয়া এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ঢাকা থেকে সিলেট পালানোর সময় ধরা পড়ে।

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে ভিডিওটিও এআই জেনারেটেড বলে প্রমাণিত হয়েছে। ৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে অস্বাভাবিক একটি হাত দেখা যায়, যা দিয়ে ওই সন্দেহভাজন হামলাকারীকে ধরে রাখা হয়েছে। কিন্তু হাতটির বিপরীতে কোনো মানুষের উপস্থিতি নেই। এই ধরনের অস্বাভাবিকতা এআই জেনারেটেড কনটেন্টে দেখা যায়।

ফেসবুকে আরও একটি গুজবে ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েমের সঙ্গে সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের ছবি শেয়ার করে দাবি করা হয়, তারা একসঙ্গে চা পান করছিলেন।

ফ্যাক্টওয়াচ জানায়, ছবিটিও সম্পূর্ণ এআই জেনারেটেড, বাস্তব কোনো ছবি নয়।

ফ্যাক্টওয়াচ জানায়, দেশে চলমান গুজব, ভুয়া তথ্য ও বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট প্রতিরোধে তারা কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত এবং সেন্টার ফর ক্রিটিক্যাল অ্যান্ড কোয়ালিটেটিভ স্টাডিজ (সিকিউএস) পরিচালিত একটি স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া ভিডিও, অপতথ্য ও গুজব ছড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে। এসব তথ্য যাচাই করে সত্য তুলে ধরার পাশাপাশি গুজব প্রতিরোধে নিয়মিত কাজ করছে ফ্যাক্টওয়াচ।বাসস 

 


 

ধ্রুব নিউজের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

💬 Comments

Login | Register
Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)